মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হিপনোসিস এবং এর ইতিহাস

জীবন মাত্রই অবচেতন মন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিছু সময়, কিছু এলোপাথাড়ি চিন্তা, কিছু আর্তনাদ, কিছু হাসি-কান্নার যোগফল। ধরে নিই, আমি কারো মনের ভেতর ঢুকে গেছি। আমার মনের প্রোগ্রাম দিয়ে তাকে চালাচ্ছি কিছু সময় ধরে। কি মনে হচ্ছে? .... অবাস্তব? আজগুবি?

ধরুন, জুরাসিক পার্ক সিনেমায় মত্ত আপনি। দেখতে দেখতে ডায়নোসরের দেশে হারিয়ে গেলেন। চোখ বন্ধ করলেই নিজেকে অবধ্য ডায়নোসরের সামনে অসহায় আবিস্কার করছেন। অথচ চোখ খুলে দেখলেন টিভি সেটের সামনে। তো কোথায় ছিলেন এতক্ষন?

দিবাস্বপ্ন! ..... সবই আপনার অবচেতন মনের খেলা।

Hypnosis শব্দের অর্থ হচ্ছে সম্মোহন। একজনের চরম প্রস্তাবনা, তীব্র আবেগ ও কল্পনাশক্তি দ্বারা অপর কারো মনকে প্রভাবিত করাকে বলা হয় হিপনোসিস বা সম্মোহন। এক্ষেত্রে যে সম্মোহন করে থাকেন তাকে বলে সম্মোহক। সম্মোহন করার সেশনটিকে বলা হয় 'হিপনোটিক সেশন'। চিকিৎসাক্ষেত্রে হিপনোসিস হচ্ছে এক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যার মাধ্যমে অ্যাজমা, কোলায়টিস, ইমনোটেনসি, ফ্রিজিডিটি, মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোর প্রতিফলন ইত্যাদি রোগের ভাল উপসম হয়। তবে জানা দরকার হিপনোসিসের সঠিক পদ্ধতি। উন্মাদরোগের মধ্যে স্কিজোফ্রিনিয়া, পারানইয়াতে হিপনোটিক সাজেশন ভাল কাজ করে। হিপনোথেরাপির উদ্দেশ্য কাউকে হিপনোটাইজ করে দেওয়া নয়। রোগীকে উপযুক্ত থেরাপির মাধ্যমে রোগীকে সুস্থ করে তোলা।

হিপনোথেরাপি মূলত হচ্ছে 'প্রোগ্রামিং অব সাবকনসাস মাইন্ড'......


সম্মোহনের ইতিহাসঃ
অষ্টাদশ শতকে সম্মোহন বিদ্যার নামকরন করা হয় 'মেজমেরিজম' ; অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরের ডাক্তার ফ্রান্ডস অ্যান্টন মেজমার নামে। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডীয় ডাক্তার জেমস ব্রেড মেজমেরিজমের নামকরন করেন "হিপনোটিজম " ; গ্রীক ঘুমের দেবতা 'হুপ্নস' এর নামে। হুপ্নস অর্থ হচ্ছে ঘুম। সম্মোহিত ব্যক্তি ঘুমের ঘোরে কাজ করে বলে এমন নামকরন করা হয়।


হিপনোসিসের কাজঃ
"Hypnosis is a mental state(according to State theory) or imaginative role-enactment (according to Non-State theory)"

চরম প্রস্তাবনা, শিথিলতা এবং তীব্রতর কল্পনাশক্তির মাধ্যমে অস্বাভাবিক স্বপ্নময় মোহগ্রস্ততায় আবিষ্ট হওয়াই হচ্ছে সম্মোহন। এটি ঘুমের মত অবস্থা হলেও আসলে ঘুম নয়। কারন পুরো সময়জুড়ে বিষয়টি জাগ্রত থাকে। কোন বই, মুভিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মত।

... হিপনোসিস চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রনে নেওয়া হয়। তারপর ঐ ব্যক্তির বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুলোকে কেন্দ্রীভূত করা হয় এবং সাথে সাথেই রিলাক্স করা হয়। মনের সব এলোমেলো চিন্তাগুলো যখন একইদিকে কেন্দ্রীভূত হয়, তখনই হিপনোটাইজড ব্যক্তি শক্তি পান। নাড়ির স্পন্দন কমে যেতে থাকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের বেগ কমে যেতে থাকে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন ইংল্যান্ডের ডাক্তার এস ডেল। তিনি সম্মোহনের মাধ্যমে ঘুম পাড়িয়ে রোগীর দাঁত তুলতেন, ছোটখাটো অপারেশনও নাকি করতেন, অনেকটা এনেসতেশিয়ার মত করে।

এই সম্মোহনের মাধ্যমে কিছুক্ষনের জন্য লোককে বশ করতে পারা যায়, কিন্তু সারাজীবনের জন্য নয়। হিপনোসিসের রেশ কেটে গেলে ঐ হিপনোটাইজড লোক বলতেও পারবেনা তার সাথে কি ঘটেছে।

বাই দ্যা ওয়ে, এই হিপনোসিস কিন্তু অনেক প্রাচীন ধারনা। হিন্দু ও বৌদ্ধশাস্ত্রে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে। তন্ত্রমন্ত্রের ধারনা, ব্ল্যাকম্যাজিক এগুলোও সম্মোহনের পরিবর্তিত অংশ বলে মনে করা হয়।

৭টি মন্তব্য:

  1. তথ্য কম ছিল। তবে ভাল হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. এত বেশি তথ্য আছে হিপনোসিস নিয়ে যা মনে করেই ভিরমি খেতে হয়। আর হিপনোসিস যেভাবে করতে হয় তা অন্য কোন পোষ্টে দেওয়া যাবে।
    :)

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. এই পোষ্টটি আপডেট করলেই মনে হয় ভাল হবে। ধন্যবাদ।

      মুছুন
  3. নো আপডেট। নেক্সট পোষ্টে যা হবার হবে। ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন